তিন ঝাড় বলল রমণী একদা প্রিয়েরে তার, ‘হায়, সেই প্রেমে আস্থা রাখে না কেউ যে-প্রেমে সঠিক খাদ্য অপ্রতুল; আর, যদি তুমি হারাও সে-প্রেমকেই গাইবে কীভাবে আর ও-প্রেমের গান? ত্রুটি যে আমার সত্যিই অতিকায়। ও প্রিয় আমার, ও প্রিয় আমার। ‘কক্ষে তোমার প্রদীপ রেখো না জ্বেলে,’ বলে রমণীয়া রমণী সে পুনরায়, ‘গোপনে, যখন রাত্রি দ্বিপ্রহর, আসব তোমার অপেক্ষ শয্যায়, নিজেকেই নিজে যদি তা করতে দেখি, মনে হয়, আমি ম’রে যাব লজ্জায়।’ ও প্রিয় আমার, ও প্রিয় আমার। ‘গোপনে গোপনে ভালবাসি আমি তাকে, দাসী রে আমার, বলি তোকে, বলল সে, ‘আমি জানি, আমি ম’রে যাব বুক ফেটে যদি সে তিলেক আমাকে ভালো না বাসে, কিন্তু আমার শুচিতা নিছনি দিলে তখনই-বা প্রাণ ধরব কীভাবে, কীসে? ও প্রিয় আমার, ও প্রিয় আমার। ‘কাজেই, তোকেই শুতে হবে তার পাশে, ও যেন ভাবতে পারে যে আমিই সেটা। আর, মনে হয়, আমরা সবাই একই জ্বলে না যখন কোনোই প্রদীপ সেথা, আর, মনে হয়, আমরা সবাই একই যখন শরীর- ঢাকা নয় পোশাকে তা।’ ও প্রিয় আমার, ও প্রিয় আমার। না-ডাকতে কোনো কুকুর, ঘণ্টা-ধ্বনি মধ্যরাতের- শুনে সে বলত নিজে, ‘ভাগ্যে মাথায় এসেছিল চিন্তাটা, কী-সুখী আমার প্রিয়েরে দেখাচ্ছে যে’; অথচ যখন দাসীটিকে সারাদিন ঝিমাতে দেখত- ব্যথা কি উঠত বেজে? ও প্রিয় আমার, ও প্রিয় আমার। ‘না, আর কোনোও গান নয়,’ বলল সে, ‘কেননা প্রেয়সী এসেছিল চুপিসারে এক-সাল আগে পয়লাবারের মতো দুপুর-রাতের প্রহরে আমার ঘরে, এবং ঘড়ির ঘণ্টাটি বাজলেই শুতে যে হবেই আমাকে চাদর মুড়ে।’ ও প্রিয় আমার, ও প্রিয় আমার। ‘হাসি-কান্নার গান, পবিত্র গান, কামনার গান’- বলেছিল লোকগুলো। কেউ কি কখনও শুনেছে অমোন গান? না- কেবল তারা সেইদিনই শুনেছিল। কেউ কি অমোন হাঁকিয়েছে ঘোড়া আর? না- শুধু সেদিন সে-ই তা হাঁকিয়েছিল। ও প্রিয় আমার, ও প্রিয় আমার। কিন্তু যেমনি ঘোড়াটির এক খুর ইঁদুর-গর্তে গেল বিলকুল ঢুকে, মাথা নীচে দিয়ে প’ড়েই সে ম’রে গেল তার প্রেয়সীর চ’ক্ষের সম্মুখে- হায় সে-ও ম’রে গেল যে তৎক্ষণাৎ, এমনই আঘাত বেজেছিল তার বুকে। ও প্রিয় আমার, ও প্রিয় আমার। দাসীটি কেবল বহুদিন বেঁচে তার কবর-দু’টির তদারকি করে, আর দু’-কবরে দু’টি বুনেছিল সে যে ঝাড়; যখন সেগুলি বড় হ’ল, তো সবার মনে হ’ত, একই শিকড়ে তাদের বাড়, গোলাপও তাদের মিলেমিশে একাকার। ও প্রিয় আমার, ও প্রিয় আমার। যখন দাসীর মরণের এল কাল, পুরুত এসেছে তার পাপ-নিরাময়ে, গোপন যা-কিছু ক’য়ে দিল বুড়ি তায়। তাকিয়ে থাকল মুখে তার মূক হ’য়ে পুরোহিত, আর সে ছিল সমঝদার, বুড়িটার কথা শুনেছিল সে হৃদয়ে। ও প্রিয় আমার, ও প্রিয় আমার। কবর দিতে সে বলল সে-দাসীটার তার কর্ত্রীর প্রিয়ের অপর পাশে, তার কবরেও লাগাল গোলাপঝাড়, আর তারপর যে-কেউ সেখানে আসে গোলাপ তুলতে ঝাড়গুলি থেকে, কার শিকড় কোথায়, জানতেই পারে না সে। ও প্রিয় আমার, ও প্রিয় আমার।