শোন, ঝড়ো পশ্চিমের উদ্দাম বাতাস তুমি শরতের বয়ে চলা গভীর নিঃশ্বাস। ঝরে পড়া পাতাদের কর তুমি তাড়া ওঝার যাদুতে যেন ছোটে অশরীরি অশুভ প্রেতেরা। হলুদাভ, কালো, ফিকে জ্বরতপ্ত লাল রোগাক্রান্ত মানুষের মত পাতাদের রং আর গাল। তোমার পাখায় ভর করে ডানা মেলা বীজ ঝাঁক বেঁধে ওড়ে নীচু, কৃষ্ণ, মাটি তার অতল গভীরে মৃতদের মত অসাড় শরীরে প্রতীক্ষায় থাকে তারা যে তোমার সহোদরা বসন্তের সুনীল বাতাস আসবে কখন? তূর্যধ্বনি বাজাবে তখন। সুরেলা মধুর সুরে পৃথিবীর সব স্বপ্ন পরিপূর্ণ করে বাতাসের রাজ্যে সুমিষ্ট বীজেরা তোলে শোরগোল লুটোপুটি খায় মেষ পালকের পিছু যেন চঞ্চল মেঘের দল। সমতল, পাহাড়ের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ভরে ওঠে বুনো রঙ, ফুলের সুগন্ধে আত্মার উদ্দাম সাহসের মতো তুমি দিকে দিকে তোল ঘূর্ণাবর্ত তুমিইতো ধ্বংস কর তুমিইতো রক্ষা কর বাতাসের বন্য আত্মা কথা শুনে যাও কথা শুনে যাও। ২ তুমি যার স্রোতধারা গভীর আকাশে আন্দোলিত ঝরে পড়ে মেঘেরা পাতার মত স্বর্গমর্ত্যব্যাপী দুই সুবিশাল মহীরূহ যারা তাদের শাখারা জড়াজড়ি করে কাঁপে তোমার চাবুকে। পাতা ঝরে পড়ে মেঘ হয়ে ওড়ে। এই মেঘ ডেকে আনে সজল বিদ্যুৎ এই মেঘ বৃষ্টি ঝড় বাতাসের দূত। নীল আন্দোলিত তুমি, সেই তরঙ্গের পরে এই মেঘ ঝরে আর ঝরে। ও বাতাস বেপরোয়া ও হাওয়া রক্তিম মদের দেবতার পিছু উদ্দাম ধাওয়া করা যেন তুমি সেই নারী- ক্ষিপ্তা, ভয়ংকরী যার এলোমেলো, রুখু চুল ওড়ে আর ওড়ে দিগন্তের প্রান্ত ছুঁয়ে অনেক ওপরে আকাশের সবচেয়ে ওপর বিন্দুতে প্রলয়ের এলোচুল ক্ষিপ্ত ভঙ্গিতে ওই ওড়ে তুমি বছরের শেষ গীত তার শব-মিছিলের শোকার্ত সঙ্গীত এই শেষ অন্ধকার রাত বছরের কবর গৃহের অর্ধ-গোলাকার ছাদ ভেসে উড়ে যাওয়া বাষ্পরা সর্বশক্তি জড়ো করা সংবদ্ধ প্রয়াসে নির্মাণ করে যার নিরেট খিলান। শোন, তুমি শোন ঝড়ের বাতাস শরতের উতলা নিঃশ্বাস। ৩ সান্দ্র সংক্ষুদ্ধ তোমার অভিঘাতে সাগরের ঘুম ভাঙে ঢেউয়ের কষাঘাতে আটলান্টিকের অসীম তরঙ্গ পথ ছেড়ে দেয়, তোলে নিবিড় সুরঙ্গ ভূমধ্যসাগর অবসন্ন থাকে গভীর তন্দ্রায় আঁকাবাঁকা সুশীতল স্রোতের ধারায়। উপসাগরের দূর একা প্রান্ত থেকে লাভা সঞ্চিত আগ্নেয় দ্বীপ দেখে আর দেখে। সাগরে ঘুমায় কত পুরনো দিনের প্রাসাদের চূড়া। গভীর ঢেউয়ে থেকে থেকে কেঁপে ওঠে যারা। তাদের শরীর, ঢেউ, জল চারপাশ অলংকৃত করে সুগন্ধী শৈবাল ফুল, সাগরের ঘাস। তোমার প্রবল ধ্বনি, তার আহ্বান শুনে নীল ফুল হয় বিহ্বল, ম্লান। শুনে যাও ও বাতাস বেপরোয়া ঝড়। ৪ উড়ে যাওয়া পাতার মতো তুলে নিয়ে যাও হালকা মেঘের মত দ্রুত গতি দাও দোলা দাও যেন ঢেউ, পাতা ভেবে ফেল ছুঁড়ে ধূসর ভাবনা রাশি উড়িয়ে বিদায় করে ব্রহ্মান্ডের পারে। স্বর্গ ছুঁয়ে ফেলা যাত্রা কর তুমি যেমন উতলা নিরুদ্দেশ ছিলো তেমনি আমার ছেলেবেলা সময়ের সুবিশাল ভারে আজ চাবুকে বিক্ষত হতে চাই তোমার মতই পলকা, অপার গর্বিত নেবে কি উড়িয়ে ওই অসুখের দেশ থেকে জীবনের কাঁটারা রক্তাক্ত করে থেকে থেকে নাও ভেবে গভীর অরণ্য এক, বাজাও বীণার মত সময় করেছে বর্ণহীন, আজ পাতা ঝরে গেছে শত। শোনাও আমার গান, ডেকে ডেকে বল আর নেই অন্ধকার, অশুভ ফুরোলো তোমার কণ্ঠের সুরে হবো বন্য গান চারদিকে ভেসে যাবে রূপময় আহ্বান। যতই বিষণ্ণ হই, আমি তবুও মধুর তোমার গানের মত বেদনা বিধুর দিনগুলো হবে দেখ সোনার মোহর আবার আসবে ফিরে মহৎ প্রহর। মহামানবের মত আমার তীব্রতা অবশেষে মুছে দেবে অলস জীর্ণতা। অগ্নিকান্ড নিভে গেছে, পড়ে আছে ছাই ছিট ফোঁটা ফুলকির মতো তবু আলো দিয়ে যাই। শীতার্ত দিনগুলো ফিকে হয়ে যায় রেশমী বসন্ত এসে ডাক দেয় ‘আয়’।