কান পেতে শোনার শীত আমি ছাড়া কেউ কোথাও নেই আগুনের ধারে আমার হাত চনমন করে করতল টকটকে লাল আর রাতের বাতাস উড়িয়ে নেয় তামাম সব, বাইরের পৃথিবীতে। মুহূর্তের তুচ্ছ দুর্ভাবনায় কী হবে, ততক্ষণ আকাশের আলখাল্লা কালো হয়ে নেমে ঘিরে ফেলেছে, যা কিছু বেঁচে। নিজের ভিতরে যা মূল্যবান তাকে মন দিয়ে জানার উপায় কী? জানতে গিয়ে সেসব কেবল হারিয়ে যায় আমাদের নিখুঁত হতে চাওয়া আকাঙ্ক্ষাগুলি আমাদের আলোকিত দেবদূত ক’রে তোলে না কিছুতেই যা টালমাটাল করে তার ভিতরেই আমাদের গোপন পোষণ। যা আমরা ঘৃণা করি নিজের ভিতরে তা হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে চেনা কঠিন আর সত্তার নক্সাকে ব্যাখ্যা করার কিছু নেই। প্রত্যেক হৃদয়ে আনন্দের গভীর চিৎকার জন্ম নেবার অপেক্ষায় টনটন করছে। এমন কি সূর্যপ্লাবিত দিন যখন অনেক দূর মনে হয় তখনো সেই চিৎকার যেন সবুজ এক বৃক্ষ হয়ে উঠে পৃথিবীর কাছে হাজির হবে। কতো বছর সেসব মানুষের সঙ্গে কাটিয়েছি আমি যাদের বলার মতো কিছুই ছিল না। কতো বছর ভুলে ছিলাম শুধু কান পেতে থাকলেই সব কিছু আপন হতে পারে। আর ধীরে ধীরে খুব কষ্টে মনে পড়ে যায় কী করে সব কিছু এক বিপরীত, অলৌকিক অপর বাস্তবতা থেকে জন্ম নেয়। নীরবতা আর শীত আমাকে সেই অপরের কাছে নিয়ে এসেছে। এই কান-পেতে-শোনা শীতের দিন আমার কাছে সেই নতুন জীবন ডেকে আনতে পারবে, আমি জানি যে জীবনকে আপন ব’লে ডাকতে পারি। প্রত্যেকটি শব্দের একটা ঘর আছে যেখান থেকে সে আসে আর একটা দরজা আছে যেখান থেকে সে বেরিয়ে নতুন ঘরে যায়। আমরা সেইসব স্বরেই কথা বলতে পারি যে স্বর আমরা কান পেতে শুনি আমাদের শরীরের কণ্ঠস্বর কেবল সেই ধ্বনিতে কথা বলে পৃথিবীর যেটুকু শরীরের স্বর তার চেনা। তখন নিজেই সে এক আস্ত পৃথিবী কান পেতে শুনতে শুনতে এক স্বকীয় ভুবন। এভাবে সে জানতে পারে তার কেমন হতে হবে কী করতে হবে। আর এই রাত্রির ডামাডোলে আমি এক কাঠবাদামের ডালে দোল খেতে শুনি কোনো শিশুকে ডালটা দাঁড়িয়ে থাকা কালো পায়ের মতো বাতাসে দোলে আর শব্দ করে বৃষ্টির ঝাপটা এখন আমার জানালায় আর এই হিমবাতাস আর তারা-ভরা রাতে অদৃশ্য সব ঝোরা যেন গ্রীষ্মের উষ্ণতায় সাপের মতো জট খোলে প্রত্যেকটি এক এক অকল্পিত ফুটন্ত গোলাপ।